নরসিংদীতে
আছে অনেক নদী।
নদীপাড়ে
কলকারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও
নদী বিশেষ
অবদান রেখে চলেছে।
তাই এ জেলায়
২টা লঞ্চঘাট ছোটবড়
২০-৩০টি ঘাট
আছে।
আপনারা দেখে
আসতে পারেন শহরের কাউরিয়া পাড়ার মেঘনা নদীর তীরে
বিআইডব্লিটি-এর লঞ্চ টার্মিনাল।
নরসিংদীর সড়ক
যোগাযোগ ভালো
। এ জেলার
দক্ষিণে অনেক
চরাঞ্চল আছে।
সেখানে যেতে
নদী পথই ভরসা।
নদী বাদ দিয়ে
নরসিংদী
চিন্তাই করা যায় না।
মেঘনা নদীর বুক চিরে
নরসিংদীর রায়পুরা
উপজেলার সায়িদাবাদ
গ্রাম।
ওখানে যাওয়ার দুটি পথ
আছে।
একটি সড়ক পথে
রায়পুরায় গিয়ে
আবার নৌকা নিয়ে ৫ কিলোমিটার।
আর ২য় পথটি
পুরোটাই নৌকায় যেতে
হয়।মেঘনার পানির একটা
মজার বিষয় আছে।
পূর্ব দিক
থেকে আসা মেঘনার পানি
নীল ও স্বচ্ছ।
আর পশ্চিম দিক
থেকে আসা ধলেশ্বরীর পানি ঘোলা।
তাই লক্ষ্য
করলে দেখা যায়
মেঘনার অর্ধেক পানি নীল আর অর্ধেক ঘোলা।
কেউ কারো
সঙ্গে না
মিশেই বয়ে চলেছে
কিলোমিটারের পর কিলোমিটার।মেঘনা অত্যন্ত গভীর,
খরস্রোতা নদী।
সারাবছরই এ
নদীতে নৌ-চলাচল সম্ভব।
মাছও পাওয়া
যায় প্রচুর।
মাছের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ।
জেলেরা
ইলিশ ধরে
সেই ইলিশ ধরা
দেখতে পারেন।শরৎকালের
মেঘনার রূপ অন্যরকম।
বাংলাদেশের
সর্ববৃহৎ
নদী মেঘনা মূলত সুরমা,
ধলেশ্বরী,
ব্রহ্মপুত্র,
যমুনা ও গঙ্গার
মিলিত
স্রোতধারা।
মেঘনা নদীর
দুটি অংশ আছে।
কুলিয়ারচর
থেকে ষাটনল পর্যন্ত
আপার মেঘনা।
নদীর এ অংশ
চওড়া কম।
ষাটনল থেকে
বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত অংশ লেয়ার
মেঘনা নামে পরিচিত।
এই মেঘনা
বিশাল এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ
মোহনার অংশ।
ভারতের আসাম
রাজ্যের লুসাই পাহাড়ে জন্ম নিয়ে মেঘনা বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
নরসিংদীর
রায়পুরা উপজেলার সায়িদাবাদ গ্রাম।
দু-আড়াই
ঘণ্টার নদীপথ
। তবে
শরতের মেঘনা
নদীর অপরূপ-রূপ দেখতে পারেন
মন ভরে। সায়িদাবাদ গ্রাম
এলাকাটি
পুরোটাই চর অঞ্চল।
গ্রামগুলো এক
একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।
অবাক হবেন
গ্রামের মধ্যে
চলাচলের আলাদা কোনো রাস্তা নেই।
গ্রামে তেমন
কোনো যানবাহনও
নেই।
শুধু নৌকা।
বিদ্যুৎও
নেই।
খবরের কাগজ আসে পরের
দিন।
নরসিংদীর এমনই এক
নিভূত দ্বীপে
১৯৩৮ সালে জন্ম নিয়েছিলেন সাহসী এক মানুষ নুরুজ্জামান।
তার
বাবার নাম আবু
আহম্মেদ ও মাতা লুৎফুন্নেছা
খাতুন।
ছয় ভাইবোনের বড়
নুরুজ্জামান
লেখাপড়া শেষ করে ১৯৬০ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
দেশের প্রতি
ভালোবাসায়
তিনি যুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলনে যোগ দেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র
মামলায় আসামি
হয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাভোগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ
শুরু হলে
মেজর এএনএম
নুরুজ্জামান সেনাবাহিনীর বাঙালি ও জয়ানদের সংগঠিত করে যুদ্ধ
পরিচালনা করেন।
১৯৭১-এর
সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ৩নং সেক্টর
প্রধানের
দায়িত্ব পালন করেন।
রণাঙ্গনে
বীরত্বের পুরস্কারস্বরূপ জাতি তাকে
বীর উত্তম খেতাবে
ভূষিত করে।
জীবদ্দশায়
তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ অনেক
বড় দায়িত্ব পালন
করেছেন।
রক্ষীবাহিনী
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার
জন্য গঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী।
১৯৭২ সালে
গঠিত এ
বাহিনী শুরুতে
কার্যকর ভূমিকা পালন করলেও পরবর্তীতে এর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ
হতে থাকে।
১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
নির্মমভাবে
সপরিবারে নিহত হলে,
পরবর্তী সরকার
রক্ষীবাহিনী বিলোপ করে
সেনাবাহিনীর অংশে
পরিণত করে।
নরসিংদীর চরাঞ্চলে চর
দখলকে কেন্দ্র করে
চলে কাইজ্যা,
চলে টেঁটা যুদ্ধ।
এ নিয়ে অনেক
কাহিনীও আছে।
চর দখল এবং
আত্মরক্ষার
কৌশলও জানতে পারবেন।
নরসিংদী শহর থেকে ১১
কিলোমিটার পূর্বে
রায়পুরা উপজেলার
নীলক্ষা গ্রাম।
এই গ্রামে
রয়েছে আতশ
আলী বাজার।
আতশ আলী
ছিলেন একজন
ধনী কৃষক।
সেই ধন তিনি
জমিয়েছিলেন কৃপণতা করে।
অর্থাৎ
আতশ আলী
ছিলেন একজন হাড়কিপ্টা।
সে এক ইতিহাস।
সেই ইতিহাস
আপনাদের জানাচ্ছি।
আতশ
আলী রায়পুরার
বীরগাঁও কান্দাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারে ১৮৮৭
সালে
জন্মগ্রহণ করেন।
ছোটবেলা থেকেই
কৃপণ আতশ আলী মৃত্যুবরণ করেছেন ওলী
হিসেবে।
দান করে তিনি
দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।
মানবকল্যাণে
তিনি বিলিয়ে
দিয়েছেন সব।
সেখানে রয়েছে
তার মাজার।
কর্মেই মানুষের পরিচয়।
কর্মের
মধ্যেই সে
বেঁচে থাকে অনন্তকাল।
এই নীলক্ষায়
রয়েছে তেমনি আরেকজন
।
যার
নামডাক ছড়িয়ে
আছে নরসিংদী,
সিলেট, বরিশাল,
ঢাকা,
মানিকগঞ্জসহ
বাংলাদেশের
অনেক জেলায়।
হারুনের শাড়ি-লুঙ্গি।
এ শাড়ি-লুঙ্গি
এতই বিখ্যাত যে,
ওগুলো
ছাড়া এক সময়
বিয়েই হতো না।
খরিদ্দার
এখানে এসে বসে থাকত শাড়ি-লুঙ্গি
ডেলিভারি নেয়ার জন্য।
আপনারা জানেন
নরসিংদী তাঁতবস্ত্রের জন্য বিখ্যাত।
সেই বিখ্যাত
একজন মানুষ হারুন।আমরা চাই ৪০ বছরের
পুরনো ঐতিহ্য আবার
ঝুমুর-ঝুমুর শব্দে
মেতে উঠুক।
নববধূর আবদার
মেটাতে আবার ছুটে আসুক
খরিদ্দার হারুন
ভাইয়ের আঙিনায়।
|